শিরোনাম

প্রকাশঃ Wed, Oct 5, 2022 9:24 PM
আপডেটঃ Sun, Mar 10, 2024 8:31 PM


জাল সনদে চাকরি নেন মাওলানা জোবাইর, দুর্নীতিবিরোধী বয়ানও করতেন

জাল সনদে চাকরি নেন মাওলানা জোবাইর, দুর্নীতিবিরোধী বয়ানও করতেন

কুড়িগ্রামে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামি মাওলানা জোবাইর হোসাইন এনটিআরসিএর জাল সনদে ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের চাকরি নেন। এনটিআরসিএ বিষয়টি শনাক্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষককে চিঠি দেয়। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপকর্মে জোবাইর প্রধান সহযোগী হওয়ায় প্রধান শিক্ষক চিঠির বিষয়টি গোপন করে যান।


জোবাইর হোসাইন ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ মসজিদের খতিব ও ইমাম।




তিনি জুমার নামাজের খুতবায় দুর্নীতিবিরোধী বয়ানও করতেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তিনি ফেঁসে যাওয়ায় তাঁকে শোকজ করেছে মসজিদ কমিটি। অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।


অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের স্বাক্ষরিত পত্রে ২০১৩ সালের ১৫ জুন সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) পদে অস্থায়ীভাবে জোবাইর হোসাইনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ওই শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে তথ্য পাঠানো হলে সেখানে ধরা পড়ে জোবাইরের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি ভুয়া। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও প্রত্যয়ন-৩-এর সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ে তা প্রকাশ পায়।


চলতি বছরের ১০ এপ্রিল এনটিআরসিএ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক জোবাইর হোসাইনের শিক্ষক নিবন্ধন সনদে দেখা যায়, তিনি ২০১২ সালে অষ্টম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেন। কিন্তু জোবাইরের দাবি করা পরীক্ষার ৩২১১০৩৩৫ রোল নম্বরটি ফরিদপুর জেলার সাধারণ বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক মো. কাওছার খানের বলে তথ্য পাওয়া যায়। জোবাইরের এনটিআরসিএ সনদটি জাল হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে চিঠি দেয় এনটিআরসিএ। তবে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতা বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার লুৎফর রহমান বিষয়টি গোপন রাখেন। আর জোবাইরকে বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।


ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাহমুদুর রহমান রোজেন বলেন, ‘শিক্ষক জোবাইর হোসাইনের এনটিআরসিএর সনদ জাল কি না আমি জানি না। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান কিছু জানাননি। ’


বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ টি এম খলিলুর রহমান বলেন, জোবাইর হোসাইনের এনটিআরসিএ সনদটি জালের বিষয়ে কোনো চিঠি এসেছিল কি না সাবেক প্রধান শিক্ষক লুৎফর কাউকে বলেননি। জোবাইর প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য করা কোচিং সিন্ডিকেটের সদস্য বলে অভিযোগ রয়েছে।


প্রশ্নপত্র ফাঁসের অন্যতম হোতা মাওলানা জোবাইর হোসাইন দেড় বছর আগে ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ মসজিদে খতিব হিসেবে নিয়োগ পান। ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজের প্রভাষক ও মসজিদটির মুসল্লি আফসার আলী বলেন, ‘মাওলানা জোবাইর জুমার খুতবায় নিয়মিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতেন এবং কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবনযাপন করা নিয়ে বয়ান করতেন। এখন শোনা যাচ্ছে, তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও প্রধান শিক্ষকের প্রধান সহযোগী। তিনি সমগ্র জাতির সামনে আমাদের লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন। ’ 


মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদ আলী সরকার জানান, খতিব জোবাইর হোসাইন মাসিক চার হাজার টাকা বেতন পেতেন। ভালো বয়ান করতেন। ছয়জন প্রার্থীর মধ্য থেকে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার করার পর তাঁকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শোকজ করা হয়েছে।




প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মামলার শিক্ষক জোবাইর হোসাইন ও আমিনুর রহমান রাসেলের দুই দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে গত বুধবার। এর আগে প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।


তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিমান্ডে তিন আসামিই প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে পুরো দায় চাপিয়েছেন পলাতক আসামি বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী আবু হানিফের ওপর। যদিও পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকা একটি প্যাকেট থেকেই ছয় বিষয়ের প্রশ্নপত্র উদ্ধার করেন। পরে চার বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল ও দুটি বিষয়ে নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়।



ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি আলমগীর হোসেন রিমান্ডে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি। তিনি বলেন, প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে বাকি আসামিদেরও রিমান্ডে নেওয়া হবে।



www.a2sys.co

আরো পড়ুন