শিরোনাম

প্রকাশঃ Sat, Dec 24, 2022 10:10 PM
আপডেটঃ Thu, Mar 7, 2024 4:45 AM


শেষযাত্রায়ও ‘সুখ মেলেনি’ বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর আলীর !

শেষযাত্রায়ও ‘সুখ মেলেনি’ বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর আলীর !
কুমিল্লা প্রতিনিধি।।

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার গুণাইঘর উত্তর ইউনিয়নের লাউয়াডুগি গ্রামের বাসিন্দা সেকান্দর আলী। ১৯৭১ সালে তাঁর বয়স ছিলো ২১ বছর। সেই তরুণ বয়সেই সেকান্দর আলীর ছিলো দেশের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা আর আবেগ। তিনি সব সময় স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন ভুখণ্ডের। সেই ভালোবাসার টানে দেশকে স্বাধীন করতে একাত্তরের উত্তাল সময়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অত্যান্ত সহজ-সরল জীবনযাপন করে গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর আলী। কখনো ছিলো না অর্থবিত্তের লালসা।




দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগে বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ৭২ বছর বয়সী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তবে নিজের জীবনের মায়া না করে দেশের জন্য ঝাপিয়ে পড়ে স্বাধীন ভুখণ্ড উপরহার দেওয়া এই বীবের মৃত্যুর পরও যেন মুক্তি মেলেনি। শেষযাত্রায় মেলেনি কৃতজ্ঞতাবোধও।  



বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর জানাজার শেষপ্রাপ্তে স্বাভাবিকভাবেই ইমাম যখন সকলের উদ্দেশে জিজ্ঞেস করছিলেন- সেকান্দর আলীর কাছে কেউ কোন কিছু পাওনা আছেন কি-না? তখনই সামান্য কিছু টাকার জন্য কয়েকজন দাঁড়িয়ে যান। এ দৃশ্য অবাক হয়েছেন সেখানে উপস্থিত অনেকেই। সেকান্দর আলীর সন্তানরাও দারিদ্র পরিবারের মানুষ হওয়ায় সেই টাকা পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমন সময়ে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সকল ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চিকিৎসক ফেরদৌস খন্দকার। জানাজা শেষে ডা. ফেরদৌস খন্দকার তাৎক্ষণিকভাবে সকল পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করে একাত্তরের ওই বীরকে দায়মুক্তি দেন।


এরই মধ্যে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।


স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর আলী স্বাধীনতার পরবর্তীতে দু’টি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আলাদা সংসারে তাঁর দুই সন্তান থাকলেও তাঁরা দারিদ্রতার মধ্যদিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে লাউয়াডুগি গ্রামের বাড়িতে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মারা যান সেকান্দর আলী। ওইদিন বাদ আসর গ্রামের জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজান নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন, ইউএসএ শাখার সভাপতি ডা. ফেরদৌস খন্দকারসহ অনেকেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদর্শন শেষে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রামের কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
শনিবার সকালে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, আমি দেবিদ্বারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি- বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর আলী খুবই সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। অর্থ-সম্পদের প্রতি তাঁর কখনো লোভ ছিলো না। তাঁদের মতো বীরদের কারণে আমরা একটি স্বাধীন ভুখণ্ড পেয়েছি। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে জানাজায় অংশ নিতে ছুটে গেলাম। গিয়ে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো কখনো কল্পনাও করিনি।



তিনি বলেন, সেকান্দর আলীর কাছে কয়েকজন লোক সামান্য কিছু টাকা পাবেন। এর পরিমাণও বেশি না; সব মিলিয়ে ২০ হাজার টাকার মতো হবে। কিন্তু অবাক হয়েছি দেখেছি- যাদের কারণে আমরা দেশ পেলাম, শেষযাত্রায় তাঁদের প্রতি আমরা নূন্যতম কৃতজ্ঞতাবোধ দেখাতেও অভ্যস্ত নই। লাশ সামনে রেখে তাঁরা পাওনা টাকা দাবি করলেন। অথচ চাইলেই এই টাকা পরে নেওয়া যেত অথবা একজন বীরের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই টাকার দাবি ছেড়ে দেওয়া যেত।



ডা. ফেরদৌস আরো বলেন, আমাদের এখনো অনেক কিছু শেখার আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা তাঁর জায়গা থেকে এই বীর যোদ্ধাদের সম্মান দিয়েছেন। বাকিটা আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, তাঁদেরকে সম্মানটুকু দেখাতে অভ্যস্ত হতে হবে। সকলের কাছে অনুরোধ থাকবে কোন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে আমরা যেন মৃত্যুর পরও অসম্মান না করি। তাহলেই  ভালো থাকবে বাংলাদেশ, আর কৃতজ্ঞতাবোধ শিখবে আগামী প্রজন্ম।



www.a2sys.co

আরো পড়ুন