শিরোনাম

প্রকাশঃ Wed, Mar 22, 2023 5:43 PM
আপডেটঃ Wed, Mar 13, 2024 9:37 AM


ব্রয়লার মুরগির দাম সহনীয় পর্যায়ে না এলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি

ব্রয়লার মুরগির দাম সহনীয় পর্যায়ে না এলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি

প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকা যৌক্তিক মনে করা হলেও বাজারভেদে তা বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৯০ টাকা পর্যন্ত। তবে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ব্রয়লার মুরগির দাম সহনীয় পর্যায়ে না এলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। প্রয়োজনে প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন অনেকে। তবে, বাজারে ব্রয়লার মুরগি ছাড়া অন্যসব পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি ১০ রোজার মধ্যে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলেও দাবি করা হচ্ছে।



আজ বুধবার রাজধানীর নিউমার্কেটের বনলতা কাঁচাবাজারের নিত্যপণ্য বিক্রয়কারী ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তদারকি কার্যক্রম শেষে এসব কথা বলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু এবং বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন।


এর আগে তারা গণসচেতনতায় দোকানে দোকানে লিফলেট বিতরণ ও পণ্যের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করেন। এ বছর রমজান উপলক্ষে ভোক্তাদের জন্য স্লোগান ঠিক করেছেন তারা। স্লোগানটি হলো পণ্য কিনি প্রয়োজনে, মূল্য রাখি নিয়ন্ত্রণে।



এদিকে আসন্ন রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার জরুরি সভা ডেকেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এতে বাজার কমিটি থেকে শুরু করে উৎপাদক পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।


বাজার পর্যবেক্ষণ শেষে ভোক্তার মহাপরিচালক বলেন, ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায়ীদের আমরা ডেকেছি। তারা আমাদের মুচলেকা দিয়েছেন। কিন্তু দামের কোনো নিয়ন্ত্রণ এখনো দেখছি না। উৎপাদন খরচের সঙ্গে পাইকারি ও খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের পর্যবেক্ষণে এসেছে ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকার বেশি হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এর প্রতিকারে সরকারকে আটটি প্রস্তাবনা দিয়েছি। যারা এর দায়িত্বে আছেন, আশা করছি তারা ভোক্তার কষ্ট কমাতে যথাযথ উদ্যোগ নেবেন। ব্রয়লার মুরগি নিয়ে আমাদের সমস্যা। আর কোথাও সমস্যা নেই। আগামীকাল থেকে যদি ব্রয়লার মুরগি সঠিক দামে না আসে, ওদের (খুচরা ব্যবসায়ী) বিরুদ্ধে মামলা হবে, মিল মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা হবে, যারা ব্রয়লার তৈরি করেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।



ব্যবসায়ী এবং সরকার কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, রমজান এলে অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যায়। সেসব কারণ আমরা চিহ্নিত করেছি। কতিপয় ব্যবসায়ী রমজানকে উসিলা করে দাম বৃদ্ধির কারসাজি করে। সেটা যাতে এবার করতে না পারে, সেজন্য দোকান মালিক সমিতি ও এফবিসিসিআইকে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করছি। নিউমার্কেটের বনলতা মার্কেট কমিটিকে আমরা দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি, যাতে কেউ কোনোভাবে কারসাজি করতে না পারে। শুধু নিউমার্কেট নয়, বাংলাদেশের যে কোনো বাজার যদি অস্থির হয়, তাহলে আমরা সেই বাজার কমিটিকে দায়ী করব এবং তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।


এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে সব জেলা-উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তার মহাপরিচালক।


বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোক্তাদের বলতে চাই, আতঙ্কিত হওয়ার কোনো দরকার নেই। সব পণ্য আছে, কোনো ঘাটতি নেই। দুই-একটি পণ্যের দাম কমেছেও।



মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, বাজারে অনেক পণ্যের দাম কমেছে। শুধু ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে। আমরা দেখেছি দোকানদার যে দামে কিনেছেন, তার থেকে অনেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এটি যৌক্তিক নয়। আগামীকাল আমরা নিত্যপণ্যসহ ব্রয়লার ও ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং সব বাজার কমিটির নেতাদের এফবিসিসিআইতে ডেকেছি। এর আগে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করেছি। সেখানে বাজার কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যারা অতিরিক্ত দাম নেবে, তাদের বিরুদ্ধে কমিটি ব্যবস্থা নেবে। আর যদি না পারে, তাহলে সেই কমিটিকে স্থগিত বা বাতিল করা হলে আমাদের কিছু করার থাকবে না। সেজন্য আমরা এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সব ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানাব, এবার রমজানে যাতে ভোক্তাদের স্বস্তিতে রাখতে পারি। দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের যে দুর্নাম আছে, সেটি যাতে না হয়, সেজন্য বাজার কমিটিকে দায়িত্ব নিতে হবে। যদি কোনো ব্যবসায়ী অহেতুক দাম বাড়ান, তাহলে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নেবে এবং এফবিসিসিআই সে পদক্ষেপকে সমর্থন করবে।


হেলাল উদ্দিন বলেন, রোজা এলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এ বছর পণ্যের দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণ নেই। যদি কোথাও বেড়ে যায়, ভোক্তা অধিদপ্তর, এফবিসিসিআই, দোকান মালিক সমিতি সবাই মিলেই আমরা সমন্বয় করব। আমরা দেখেছি ডাল, ছোলাসহ অনেক পণ্যের দাম কমেছে। বেড়েছে শুধু ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির দাম আড়াইশ বা তিনশ টাকা হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ভোক্তা অধিদপ্তর আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে, আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে আমরা যাতে দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসি। সেজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বলা হবে। যদি দাম যৌক্তিক করতে না পারি, তাহলে আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, পাশের দেশ থেকে ডিম ও মুরগি আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। আমরা সবসময় বলে আসছি, আমরা শিল্পকে নিরাপত্তা দেব। কিন্তু তার অর্থ এই না, আপনারা ভোক্তাকে কষ্ট দেবেন, রমজান এলে আপনারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবেন, আর সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে। এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। আশা করি আগামীকাল থেকে ব্রয়লারের দাম কমে আসবে।


তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্য, ডলার ও আমদানি খরচ বেড়েছে। এর পরেও বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন ভালো। সেজন্য আমরা মনে করি, ভোক্তার কোনো কষ্ট হবে না। এমন কোনো কাজ আমরা ব্যবসায়ীরা করব না, যাতে ভোক্তার কষ্ট হয়।



www.a2sys.co

আরো পড়ুন