শিরোনাম

প্রকাশঃ Tue, Apr 4, 2023 2:13 PM
আপডেটঃ Wed, Apr 17, 2024 2:54 PM


ঘুরে এলাম মেঘে ডাকা সবুজ পাহাড়ে

ঘুরে এলাম মেঘে ডাকা  সবুজ পাহাড়ে

                   মহিউদ্দিন আকাশ                            

রাইজিং জার্নালিস্ট ফোরাম কুমিল্লার ট্যাুর হবে কিন্তু কোথায়? কখন? সিদ্ধান্তের জন্য কুমিল্লার জনপ্রিয় পত্রিকা আমাদের কুমিল্লা অফিসে ট্যুর প্রস্তুতি  সভা ডাকলেন ফোরামের সভাপতি তৈয়বুর রহমান সোহেল ভাই।


কক্সবাজার নাকি বান্দরবন?  জাফলং নাকি খাগড়াছড়ি? নাকি উত্তরবঙ্গের দিকে? নানান জনের নানান মত  অবশেষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহিউদ্দিন মোল্লা ভাইয়ের প্রস্তাব খাগড়াছড়ি ই চুড়ান্ত সিদ্বান্ত হল।  ১০ ই সেপ্টেম্বর সকাল ৬ টায় খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে টাউন হল ময়দান থেকে কিন্তু ৯ তারিখ রাতের বৃষ্টি ভাবনায় ফেলে দিল!  পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিতে যাওয়া হবে কি? সকালে ঘুম ভাঙ্গল তৈয়বুর রহমান সোহেল ভাইয়ের কলে,  তখনও ঘুরি ঘুরি বৃষ্টি পড়ছে,  বৃষ্টির মাঝেই রওয়ানা হলাম টাউন হল মাঠে,  গিয়ে দেখি মাহফুজ নান্টু ভাই, সোহেল ভাই ও শরীফ দাড়িয়ে চা পান করছে,  এরই মাঝে একজন হকার এসে নান্টু ভাইকে পিন্টু ভাই বলে সম্বোধন করায়  হাসির রোল পড়ল।  এরই মাঝে অমিত দা,  মাসুদ আলম,  ও আশিকুর রহমান এল।  কিছুক্ষন পড় এলেন আব্দুর রহমান ভাই ও মহিউদ্দিন মোল্লা ভাই।


দুইটি সি,এন,জি করে আমরা বিশ্বরোড এসে সকালের নাস্তা সেরে সৌদিয়া বাসে করে ফেনী আসলাম। ফেনী থেকে শান্তি পরিবহনে করে রওয়ানা হলাম খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্য। বাসে আব্দুর রহমান ভাই সকলের মাঝে বাদাম বিতরন করলেন।  আব্দুর রহমান ভাই ও মাহফুজ নান্টু ভাই মাঝে মাঝে তাহেরী ডায়ালগের মাধ্যমে আমাদের কে আনন্দে মাতিয়ে রাখলেন। কথা ক্লিয়ার? না ভেজাল আছে? রহমান ভাইয়ের প্রধান ডায়ালগ আর নান্টু ভাইয়ের ডায়ালগ হল ,  আমার মন জানে! আমি কি চাই? 


সোহেল ভাই মাঝে মাঝে গানের সুর ধরলে সঙ্গ দেয় আশিক ও শরিফ আর আমরা নিরব শ্রোতা।  গাড়ি চলচে তার আপন গতিতে পাহাড়ের নির্জন পথ ঘেষে।  পাহাড়ি গাছ গাছালি যতটা না আনন্দ দিয়েছে তারচেয়ে ভয়ই বেশী কাজ করছিল। মনে হচ্ছিল  যেন দ্রুতগামী গাড়িটি বুঝি পাহাড় থেকে পড়ে গেল!  দুপুর ৩ টা নাগাদ আমরা খাগড়াছড়ি শহরে পৌছলাম। আমাদের রিসিভ করলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টুয়েন্টি ফোর চ্যানেলের খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি জহুরুল ভাই। হোটেল বর্নতে থাকার ব্যবস্থা হলেও দুপুরের খাবার খেতে যেতে হল শহর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দুরে খানময় রেষ্টুরেন্টে।  শুটকির কয়েক আইটেমের সু স্বাদু ভর্তার সাথে ছিল দেশী মুরগী ও সিদ্ব লাউ  পাতা।  খাবার শেষে চাদের গাড়িতে করে চললাম তারেং পাহাড়ে,  পাহাড়ের উপরে পাহাড় যেন আকাশ ছুয়ে যাবে।


চারদিকে যেন আকাশ মাটি ছুয়েছে মেঘেরা ছুটাছুটি করছে, তারই মাঝে সবুজ গাছ গাছালি গুলো হেলে দুলে যেন নৃত্য করছে। অপরুপ দৃশ্যগুলো যে করো ই মন ছুয়ে যাবে। সকলেই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে নিজেকে ও প্রাকৃতিক পরিবেশটিকে ক্যামেরা বন্দিতে ব্যস্ত। হঠাৎ মোল্লা ভাই ডাকলেন দ্রুত চাঁদের গাড়িতে আসার জন্য পরবর্তি স্পট আলোর টিলায় যেতে হবে। তারেং পাহাড়কে বিদায় জানিয়ে চলে এলাম আলুর টিলায়!  যাব অন্ধকার সুড়ঙ্গে!  মজার বিষয় হচ্চে মহিউদ্দিন মোল্লা ভাই আর আমি ছাড়া সকলেই আলোর টিলায় নতুন।  সুযোগ বুঝে সবাইকে ঝোক,সাপ ও পিচ্ছিল পথের ভয় দেখাচ্ছিলাম।  তবুও সকলে আলোর মশাল হাতে নিয়ে গুহায় ডুকল। গুহায় সকলেই আওয়াজ করেছে, কেউ আনন্দে আবার কেউ ভয়ে।  গুহা থেকে বেড়িয়ে চললাম জহুরুল ভাইয়ের বাসায়। জহুরুল ভাই ও তার পরিবারের আথিয়েতায় সকলে ই মুগ্ধ।  অনেক্ষন বিভিন্ন বিষয়ে আড্ডার মাঝে জহুরুল ভাই সকলকে ম্যালিরিয়া রোগের ব্যাপারে সতর্ক করলেন এবং খাগড়াছড়ির মশার ব্যাপারে এমন ব্রিফ দিলেন যে হোটেলে ফিরে সবাই মশারি টানাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। মশারী ভিতরে বসে বসে এবার  শুরু হল গানের আসর। মাহফুজ নান্টু ভাই, সোহেল ভাই,  শরীফ ও অমিতদার সাথে আমিও তাল মেলালাম। মাঝে রহমান ভাই ও মাসুদ ভাই এসে যোগ হলেন। গানের তালে তালে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাইনি,  সকালে নান্টু ভাইয়ের তাহেরী ডায়ালগে ঘুম ভাঙ্গল।  ফ্রেশ হয়ে মোহছেন আউলিয়া রেষ্টুরেন্টে নাস্তা সেরে চাঁদের গাড়িতে করে চললাম দেবতার পুকুরের উদ্দেশ্য।  চাদের গাড়িতে সকলে গান গাচ্ছিল কিন্তু পথিমধ্যে পাহাড়ের উচ্চতা ও সৌন্দর্যে মনের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসল আল্লাহু আকবর, সুবহান্নাল্লাহ। রাশেদ ভাই আর সোহেল ভাই একে অপরকে টিপুনি কাটছিল।



চাঁদের গাড়ি থামাতে ভাবলাম দেবতার পুকুর চলে এসেছি কিন্তু আমাদের হতাশ করে দিয়ে মহিউদ্দিন মোল্লা ভাই বললেন পথ আরো দূর বহুদুর।  পাহাড় বেয়ে উপরের দিকে উঠছি আর প্রকৃতি ঘেরা পরিবেশ কে আমি আর রাশেদ ভাই ক্যামেরা বন্দি করছি। রাশেদ ভাই পাহাড়ি বাচ্চাদের সাথে দুষ্টুমি করলেন। ছবি তুলতে তুলতে এক সময় দেবতার পুকুরের সন্ধান পেলাম। পুকুর পাড়ের বিশাল বটগাছ তলায় সবাই ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিল।  পাশের একটি দোকান এবং একদল পাহাড়ি বট গাছ তলায় বসে আড্ডা দিচ্ছিল। আমরা কয়েক জন পুকুরে গোসল করলাম অন্যরা বটগাছ তলায় বসে পাহাড়িদের সাথে ভাব জমাল। কুমিল্লা ফেরার টিকেট কাটা হয়েছে ৩ টার।  তাই ফেরার তাগিদে আবার পাহাড় থেকে নামার অভিজান শুরু।  একটু পথ যেতেই মোল্লা ভাই,নান্টু ভাই, রহমান ভাই, সোহেল ভাই এবং আমি বসলাম পাহাড়ের উপড়ে ছোট্র কুঠিরে,  এরই মাঝে রাশেদ ভাই শসা খেতে খেতে এসে বললেন পাহাড়ি শসা অনেক মজা। শুরু হল জায়েজ নাজায়েজের তর্ক, কিন্তু হঠাৎ নান্টু ভাই চলে গেলেন পাহাড়ের একটু উচুতে ধান ক্ষেতের ঝোপে শসার সন্ধানে। শসা না পেলেও হঠাৎ বৃষ্টি সবাইকে ভিজিয়ে দিল। একটু নিচের আরেকটি কুঠিরে বসে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় ফটো শেসন চলল। ফেরার তাগিদে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্য দিয়েই পাহাড় থেকে পাহাড়ে অবশেষে লোকালয়ের পথে, চাঁদের গাড়ির কাছে এসে দেখি সবাই কলা খেতে ব্যস্ত। দোকানদারও মেহমানদারীর মতই আপ্যায়ন করছে অবশ্য পরে বিলও নিয়েছে। হোটেলে ফিরে সকলে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে কিছু কেনা কাটা করে,  আবারও শান্তি পরিবহনে করে আপন শহর কুমিল্লায় পৌছলাম রাত সাড়ে নয়টায়। কুমিল্লায় চলে এলেও আজও মন পড়ে আছে মেঘে ডাকা সবুজের পাহাড়ে।


অবচেতন মন বলে উঠে, আবার যাব মেঘে ডাকা শহরে,  যে শহর সকল ক্লান্তি দুর করে 



www.a2sys.co

আরো পড়ুন