শিরোনাম

প্রকাশঃ Sat, Nov 2, 2024 12:54 PM
আপডেটঃ Sat, Dec 14, 2024 7:29 AM


শেখ হাসিনাকে খুশি করতে নিজের বাবাকে রাজাকার বলতেন নাঈমুল ইসলাম খান

শেখ হাসিনাকে খুশি করতে নিজের বাবাকে রাজাকার বলতেন নাঈমুল ইসলাম খান

শেখ হাসিনাকে খুশি করতে ও তার দয়া পেতে নিজের বাবাকে রাজাকার বলতেন সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান। তিনি ছিলেন পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার প্রেস সচিব। তাকে নিয়ে লিখেছেন তার আপন ভাই। পাঠকদের জন্য তার ভাইয়ের লিখা হুবহু তুলে ধরা হল



কুমিল্লার দেবীদ্বারের (মরহুম) নুরুল ইসলাম খান রাজাকার ছিলেন না।

আমার আব্বা নুরুল ইসলাম খান, ১৯৬৬ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা বা কনস্টিটুয়েন্সি থেকে মুসলিম লিগ (ফাতেমা জিন্নাহ)-র মনোনীত প্রার্থি হিসাবে এমপিএ নির্বাচিত হয়েছিলেন। 


১৯৬৯ সালে Combined Opposition Party (COP) এর তৎকালীন বৃহত্তর কুমিল্লার আহবায়ক হিসাবে ঊনষত্তুরের গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। 


১৯৭০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লিগের ভরাডুবি হয় এবং তারপরই ১৯৭১ সালে যুদ্ধ আরম্ভ হতেই উনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। তিনি সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে চুপ হয়ে গিয়েছিলেন। 


মুসলিম লিগ (ফাতেমা জিন্নাহ) করার কারনেই, বাই ডিফল্ট, আব্বার নাম তৎকালীন শান্তি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পুরো সময়টা তিনি তাঁর কুমিল্লার বাগিচাগাও-র খাঁবাড়িতেই কাটিয়েছিলেন। 


আব্বা কখনোই রাজাকার ছিলেন না। ১৯৭১ সালে সংঘটিত কোনো অপরাধের সঙ্গেই তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। রাজনৈতিক অবস্থানের হিসাবে তিনি নিউট্রাল ভূমিকায় ছিলেন। 


বিগত প্রায় ৩৫ বছরকাল ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে, টিভির টকশোতে তাকে রাজাকার বলতে বলতে, জীবিত থাকাকালীন তো বটেই, ১৯৯৮ সালে মৃত্যুর পরেও, এখনো, তাকে কোনঠাসা করে হেয় করা হচ্ছিল। 


হ্যা, সত্যি, আমি, নুরুল ইসলাম খানের ছোট ছেলে হয়েও প্রকাশ্যে, পাবলিকলি, কখনও প্রতিবাদ করতে পারি নাই। 


কিন্তু এখন করছি। তীব্রভাবে প্রতিবাদ করছি। 


যেমনভাবে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ছেলেমেয়েরা এতবছর পরে এসে মুখ খুলেছে, প্রতিবাদ করা শুরু করেছে।


বিগত প্রায় ৩৫ বছর ধরে নিজ সন্তান দ্বারা অপদস্থ হওয়া নুরুল ইসলাম খান মৃত্যুর এতবছর পরেও এখনো অপদস্থ হয়েই চলেছেন একটা ডাহা মিথ্যা অপবাদে। 


দেখুন কী একটা অবস্থা, নিজ পিতাকে রাজাকার এবং স্বাধীনতা বিরোধী বলতে বলতে নিজেই এখন ২০২৪-র রাজাকাররূপে পালিয়ে বেড়াইতে হচ্ছে। 


নুরুল ইসলাম খান তার জীবদ্দশায় কখনও পালিয়ে বেড়ান নি। পালাতে হয় নাই তাকে। 


রাজনৈতিক আদর্শগত পার্থক্য থাকার কারনে, এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা সসম্মানে তাকে জেলখানায় দিয়ে এসেছিলেন। এবং, প্রায় দুই বছর পর, সকল আইনীপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে ফিরিয়ে এনেছিলেন ওই মুক্তিযোদ্ধারাই। 


এর বহু বছর পরে আব্বা নুরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। দেবীদ্বার আসন থেকে বিএনপির সর্বশেষ সংসদ সদস্যও তার হাত ধরেই নির্বাচিত হয়েছিলেন। 


১৯৭১ সালে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে যারা ছিলেন তাদের সবাই রাজাকার? রাজাকার, আলবদর, আল শামস নামক ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপগুলার সাথে আব্বার কখনোই কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। রাজনৈতিক কারনে যতটুকু পরিচিত তখন ছিলেন, অতটুকুই। 


যাইহোক, সে নুরুল ইসলাম খানকে যদি পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সর্বশেষ প্রেস সচিবের পিতা হওয়ার কারনে আবারও নিগৃহীত হইতে হয় তাহলে তা নুরুল ইসলাম খান এবং তার অন্যান্য সন্তান - যারা আওয়ামিলীগ বিরোধিতাই করে আসছিল, তাদের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কীই বা বলার থাকবে!


নুরুল ইসলাম খানের বড় সন্তান, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সর্বশেষ প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান তার পিতাকে রাজাকার আখ্যা দিয়ে তার সম্পর্কে যে অবস্থান জানান দিয়ে রেখেছেন, পারিবারিকভাবে আমরা কখনই তা সমর্থন করিনি, কখনও সমর্থন করার প্রশ্নও আসে না।



www.a2sys.co

আরো পড়ুন