নারী শিক্ষকদের জন্য ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ। ১২৩ বছরের প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠে চালু করা হয়েছে ডে-কেয়ার সেন্টার। যেখানে সন্তানদের রেখে নিশ্চিন্তে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী হতে পারবেন শিক্ষক মায়েরা।
কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষক পরিষদের নেতারা বলছেন- কলেজে অর্ধশতাধিক নারী শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। তাদের অনেকের শিশুসন্তান আছে। সন্তানদের বাড়িতে রেখে বা সঙ্গে করে নিয়ে এসেও স্বস্তি পাচ্ছিলেন না শিক্ষকরা। বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে চালু করা হয়েছে এই ডে কেয়ার সেন্টার বা শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজের ডিগ্রি শাখা ক্যাম্পাসে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু জাফর খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মৃণাল কান্তি গোস্বামী, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মঈন উদ্দিন, সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জিতেন্দ্রনাথ তরফদার, সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাত বিনতে মামুনসহ শিক্ষকরা।
সরজমিনে দেখা গেছে, শিশুদের আনন্দ দিতে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশে সাজানো হয়েছে। শিক্ষণীয় অনেক লেখা, ছড়া ও ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে দেয়াল। রাখা হয়েছে নানা ধরনের খেলনা।
শিশুদের সার্বিক নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের দেখাশোনা করতে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজনকে।
এছাড়া নারী শিক্ষকরা পাঠদান শেষ করে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে প্রবেশ করছেন। কেউ তার বাচ্চাকে নিয়ে খেলছেন, কেউবা খাবার খাওয়ানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাত বিনতে মামুন বলেন, “আমাদের বাচ্চাদের নিয়ে আসতে হয় কলেজে। না হয় প্রতিনিয়ত দুঃশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। এখন থেকে স্বস্তিতে ক্লাস নেওয়া যাবে।
অধ্যক্ষ স্যারের দেওয়া দায়িত্বের কারণে দিবাযত্ন কেন্দ্রটি তৈরিতে আমিও সঙ্গে ছিলাম। তাই নিজের মতো করে সাজিয়েছি। এখানে বাচ্চাদের জন্য চকলেট ও খাওয়ার ব্যবস্থায় থাকবে। শিক্ষার্থীরাসহ যারা বাইরে থেকে আসবেন তারাও শিশুদের এখানে রাখতে পারবেন।
নাসরিন আক্তার নামের আরেক শিক্ষক বলেন, “আমার ছোট বাচ্চাকে বাসায় রেখে এসে নিশ্চিন্তে ক্লাস নিতে পারতাম না। সারাক্ষণ মন পড়ে থাকত বাড়িতে। এখন এই ডে কেয়ারে সন্তানকে একজনের তত্ত্বাবধানে রেখে পুরো মনোযোগ দিয়ে ক্লাস নিতে পারবো। ক্লাস শেষে বাচ্চার সঙ্গে খেলতে পারবো। খুবই ভালো লাগছে।”
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক হাসনা হেনা লিজা বলেন, ক্যাম্পাসে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। আমরা কর্মজীবী মায়েদের সবার চিন্তা আমাদের বাচ্চা চোখের আড়ালে রয়েছে। সেখানে সে ঠিকমতো খাবার খাচ্ছে কিনা? তার কোনো কষ্ট হচ্ছে কিনা? এসব চিন্তা যেন পিছু ছাড়ে না। বিশেষ করে পরীক্ষার সময়গুলো কঠিন হয়ে ওঠে। তাই শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু করা অসাধারণ একটি উদ্যোগ।
কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মঈন উদ্দিন বলেন, “নারী সহকর্মীদের কথা ভেবে আমরা বিষয়টি নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করি। স্যার বিষয়টা বুঝে এটি নির্মাণে জন্য সম্মতি দেন। এখন আমাদের কলেজের যেসব নারী শিক্ষক রয়েছেন তারা স্বস্তিতে আছেন।
“নিঃসন্দেহে এই শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রটি কলেজের পাঠদানে একটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। দেশের অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আছে কি-না, সেটি আমার জানা নাই। কুমিল্লায় এটিই প্রথম বলে মনে হচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু জাফর খান বলেন, নারী শিক্ষকদের জন্য বাড়িতে শিশুসন্তানকে রেখে এসে কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া কষ্টকর ব্যাপার। তাই কলেজ ফান্ড থেকে নেওয়া অর্থ দিয়ে এই শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এখানে আমরা শিশুদের খেলাধুলার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করেছি। মায়েরা যেন তাদের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন সে রকম পরিবেশও এখানে আছে। একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি বাচ্চাদের দেখে রাখবেন।
ড. আবু জাফর আরও বলেন, “পরীক্ষার সময় আমাদের কলেজে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরাও তাদের শিশুসন্তান নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসেন। শিশুকে হলের বাইরে রেখে পরীক্ষা দেওয়া তাদের জন্য অনেক কষ্টের। তাই আমাদের চিন্তা আছে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রটির পরিসর আরও বাড়ানোর। যাতে নারী শিক্ষার্থীরাও তাদের সন্তানদের নিয়ে যেন কোনো ভোগান্তিতে না পড়েন।