গত কমিল্লা সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের নেপথ্যে দলের একাংশকে দায়ী করেন দুইবারের সাবেক মেয়র ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। অভিযোগ তোলেন ক্ষমতাসীন দলের সাথে আঁতাত করে তাঁর বিপক্ষে প্রার্থী করা হয় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন উর-রশিদ ইয়াছিনের শ্যালক নিজামউদ্দিন কায়সারকে। এতে লাভবান হয় আওয়ামী লীগ। অথচ রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও সদর আসনে এমপি প্রার্থী হিসেবে তিনি কখনও হাজী ইয়াছিনের বিকল্প হতে চাননি। সিটি করপোরেশন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছিলেন বলে জানান। তাই তখন ক্ষুব্ধ হয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তিনি প্রার্থী হননি।
অনেকের ধারণা জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে এবং কুমিল্লা সদর থেকে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী হাজী আমিন উর-রশিদ ইয়াছিন। অবশ্য বিএনপি ভোট বর্জন করেছে,সাক্কু প্রার্থী হননি এবং তাঁর বহিষ্কারাদেশও প্রত্যাহার হয়নি। তাই আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আসনটিতে তার সমর্থকদের ভোট কোনদিকে যায় এবং তার ভূমিকা কি হয়,এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
অন্যদিকে গত ১৩ ডিসেম্বর মেয়র আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যু হওয়ায় সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচন সাক্কুর ভূমিকা কী হতে পারে, এ নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। অবশ্য সিটি করপোরেশন এখনও শূন্য ঘোষণা না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি কেউ। আবার সিটি নির্বাচনের জন্য নিজে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা জানালেও স্বীকার করেননি সাক্কু। তাই এ মুহূর্তে সংসদ নির্বাচনে তার অবস্থা্ন কী, সেদিকে সবার নজর। কারণ বহিষ্কৃত হলেও বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ তার অনুসারী। সাধারণ মানুষের কাছেও তার নিজস্ব জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন সাময়িক ভুলের কারণে বহিষ্কার হলেও যেকোনো সময় দল তাকে টেনে নেবে। তাই পা ফেলছেন ভেবে-চিন্তে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)র কুমিল্লা জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট অশোক দেব জয় বলেন- বর্তমান ভাগাভাগির নির্বাচন নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। যেখানে বুর্জোয়া দলগুলোর সার্থবাদী রাজনীতির কাছে তারা অসহায়, সেখানে সাক্কুর সাথে কোন প্রার্থীর সমঝোতা হলো কী হলো না-এসব প্রশ্ন অবান্তর।
কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি) ও সংরক্ষিত আসনের এমপি আঞ্জুমান সুলতানা সীমা বলেন- জনগণই তার প্রধান শক্তি। তাই কোনো বিশেষ নেতা্র সাথে তার আলাদা বৈঠকের প্রশ্নই ওঠে না।
কুমিল্লা মহা্নগর আওয়ামী লীগের আরেক সহ-সভাপতি (বাহার সমর্থিত) অ্যাডভোকেট জহিরুল হক সেলিম বলেন- উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আবারও এমপি হবেন হাজী বাহার। সাবেক মেয়র সাক্কুর সাথে সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে তিনি জানান।
সার্বিক বিষয়ে কথা হয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর সাথে। তিনি জানান,এ মুহূর্তে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই। দল তার বহিস্কারদেশ প্রত্যাহার না করলেও তিনি বিএনপির আদর্শের বাইরে যাননি। দলের ব্যানারে না থাকলেও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছেন তার নেতাকর্মীরা।
জানান, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের গ্রিন সিগনাল না পেলেও গত বছরের ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশ ও চলতি বছরের ৫ অক্টোবর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রোডমার্চে অংশগ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে গ্রেফতার প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে জামিনে মুক্ত করেছেন নিজ খরচে। দল ও জনগণের প্রতি আস্থা আছে বলে কারও সাথে বিশেষ সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে তার দাবি।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের সিটি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওযায় একই বছরের ১৯ মে আজীবনের জন্য বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন দুইবারের সিটি ও একবারের সাবেক পৌর মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।