সাংবাদিক আকাশের ছোট্ট পরিবারের স্মৃতিময় ঈদ
কুমিল্লা শহরের এক ব্যস্ত দিন। সাংবাদিক মহিউদ্দিন আকাশ প্রতিদিনের মতো খবর সংগ্রহ, রিপোর্ট লেখা আর দায়িত্ব পালনে দিন কাটান। তার স্ত্রী জেমি একজন আদর্শ মা, আর তাদের একমাত্র ছেলে আবির—মাত্র আড়াই বছর বয়স, কিন্তু দুরন্তপনা আর মিষ্টি হাসিতে মন ভরিয়ে রাখে সবার।
ঈদের ছুটিতে সিদ্ধান্ত হলো—এইবার গ্রামে যাওয়া হবে। শহরের কোলাহল ছেড়ে, ফেসবুক-ইউটিউব নয়, এবার প্রকৃতির মাঝে ঈদের আনন্দ খুঁজবে ছোট্ট পরিবারটা। তাই ঈদের দুই দিন আগে তারা নিজেদের প্রাইভেটকারে করে রওনা দিল কুমিল্লা শহর থেকে আকাশের পৈতৃক গ্রামে।
গ্রামে পৌঁছেই যেন এক অন্য জগতে পা রাখল আবির। দাদা-দাদু দৌড়ে এসে কোলে তুলে নিল। বাড়ির উঠানে, আমগাছের ছায়ায়, দাদুর হাত ধরে আবির হাঁটতে শিখল নতুন পথের গল্প। জেমি মায়ের চোখে দেখলেন নিজের শৈশব—আর আকাশ দেখলেন, কীভাবে তার ছেলেটা গ্রামবাংলার প্রকৃতিতে ভেসে যাচ্ছে।
ঈদের দিন সকালে আবির বাবার, দাদার, জেঠা কামরুজ্জামান, চাচ্চু মাইনুদ্দীন, ফয়সাল ও আব্দুল্লাহর সাথে ঈদগাঁয়ে গেল। যদিও নামাজে অংশ নেয়নি, কিন্তু তাদের সাথে থেকেই নতুন কিছু দেখার কৌতূহলে ভরে গিয়েছিল তার মন। পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা, ছোট্ট সাদা টুপি মাথায়—আবির যেন ছিল ঈদগাঁয়ের ক্ষুদে অতিথি।
দুপুরে মাটি গরম হয়ে এলেও পুকুরপাড়ের বাঁশের মাচায় বসে পা ঝুলিয়ে আবির চুপচাপ পানির দিকে তাকিয়ে ছিল। তার বয়স কম—তবে প্রকৃতির প্রতি তার বিস্ময় ছিল অনেক বেশি।
এরপর শুরু হলো আসল গ্রামীণ আনন্দ। দাদা-দাদু তাকে নিয়ে গ্রামের ভেতর ঘুরে দেখালেন ফসলের মাঠ, খড়ের গাদা, আর গরুর গোয়ালঘর। জেঠা কামরুজ্জামান তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে দেখালেন গাছে বসা শালিক, কাঠঠোকরা, আর আকাশে ওড়া ঘুড়ি। চাচ্চু মাইনুদ্দীন, ফয়সাল আর আব্দুল্লাহর সাথে সে বেড়াল পুকুর পাড়, পাখির নীড়, আর দিগন্তজোড়া সবুজ ধানক্ষেত।
আর ছিল ফুফিদের ভালোবাসা—আমেনা, তামান্না আর সুমাইয়া তাকে বালিশ বানিয়ে কোলে রাখতেন, গল্প বলতেন, খাওয়াতেন। আবির নিজেকে যেন রাজপুত্র ভাবত—সবার আদর আর যত্নে সে ছিল যেন ঈদের কেন্দ্রবিন্দু।
গ্রামের উঠানে চলত খেলা—চাচাত ভাই হুসাইন, ফুফাত ভাই আদিল আর আদরের খালাত বোন হাফসা, হামিদা, জান্নাত, তাকওয়ার সঙ্গে সে কখনো মার্বেল খেলত, কখনো পাতা কুড়াত, আবার কখনো বৃষ্টির পানিতে হাত ছুঁইয়ে খুশি হতো।
জেমি এসব দৃশ্য দেখে শুধু বললেন,
“এটাই আসল ঈদ, আবিরের শৈশব যেন প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠে।”
সাংবাদিক আকাশ ঈদের দিন সন্ধ্যায় লিখে ফেললেন একটা স্ট্যাটাস:
“আমার সন্তানের জন্য গ্রাম হচ্ছে একটা জীবন্ত বই—যার প্রতিটি পৃষ্ঠা প্রকৃতির গল্প বলে, আর প্রতিটি চরিত্র মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়।”
ঈদের এই ক’টা দিন আবিরের জন্য কেবল আনন্দ নয়, তার জীবনের প্রথম প্রকৃতি দেখা, আত্মীয়দের ভালোবাসা পাওয়া, আর ছোট ছোট অনুভব দিয়ে বড় হয়ে ওঠার সময়। এই ঈদের গল্প থাকবে তার মনে সারাজীবন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Reporter