প্রতিবেদক কিম গিউ-হি
দক্ষিন কোরিয়ার হেনামের একটি জাহাজ নির্মাণ কারখানা ফেব্রুয়ারিতে (২০২৫) দুই বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিককে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছে।
চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন যে,তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হতে হয়েছে, যেমন নির্বাসনের হুমকি এবং ছুটি বাতিল করতে বাধ্য করা হয়েছে।
গত বছর, মোর্শেদ এবং রিয়াদ (৩০/৩২) বাংলাদেশ থেকে পেশাদার কর্মীদের জন্য প্রদত্ত E7 ভিসা নিয়ে কোরিয়ায় প্রবেশ করেছিল এবং গত বছরের মে মাস থেকে হেনামের একটি শিপইয়ার্ডে ওয়েল্ডার হিসেবে কাজ করছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে, যখন চুক্তির মেয়াদ প্রায় এক বছর বাকি ছিল, কোম্পানি হঠাৎ তাদের বরখাস্ত করার কথা জানায়।
মোর্শেদ বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মী জানান, "আমি আমার রুমে অসুস্থ ছিলাম, হঠাৎ কোম্পানি আমাকে ফোন করে। আমি যখন সেখানে যাই, তখন কোম্পানির কর্মকর্তারা সেখানে বসে ছিলেন এবং আমাকে দুটি নথি/চুক্তি পত্র দিয়েছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল যে আজ থেকে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমাকে কোম্পানির দেওয়া বাসা ছেড়ে দিতে হবে। আমি সর্বদা আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বৈধ আদেশ মান্য করেছি এবং কাজে কখনো অনুপস্থিত ছিলাম না।
মোর্শেদ দাবি করেছিলেন যে, তাদের নিয়মিত কাজে কোনও সমস্যা ছিল না, এবং সেখানে একজন বাংলাদেশি দালালের দ্বারা তাদের উপর অপমানজনক মন্তব্য, নজরদারি এবং জোরপূর্বক ছুটি বাতিলের আহ্বান জানানোর মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।
রিয়াদ জানান, "বাংলাদেশি সেই দালাল সবসময় আমাদের তার কথা শুনতে বলত, এবং যদি আমরা তার কথা না শুনি, সে আমাদের হুমকি দিত যে, 'আমরা তোমাকে যেকোনো সময় বাংলাদেশে পাঠাতে পারি', এবং আমাদের কে কোম্পানি ছেড়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে।
সে প্রস্তাব দিয়েছিল যে, 'নতুন চাকরি খুঁজে পেতে আমাদের সাহায্য করবে' এবং 'আমরা যদি রাজি না হই, তাহলে আমাদের কোরিয়া ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে' এই বাংলাদেশি দালালের হুমকির কারণে তাদের কাছে কর্মসংস্থান চুক্তি সমাপ্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।
তবে, বর্তমান আইন অনুসারে, যদি কোনও কর্মসংস্থান চুক্তি বাতিল করা হয়, তাহলে তাদের ১৪ দিনের মধ্যে দেশ ছেড়ে যেতে হবে এবং এই 'চুক্তি'র কারণেই স্থানীয় শ্রম কমিশন এপ্রিল মাসে অন্যায্য বরখাস্ত থেকে মুক্তির জন্য তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল।
তাদের এমন পরিস্থিতিতে ফেলা হয়েছিল যেখানে দেশ ছেড়ে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিল না।
ট্রু এডুকেশন প্যারেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কিম ইউন-হাওয়া/জিওনাম শাখা ব্যবস্থাপক বলেন,
"কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের আইনি ব্যবস্থা এবং পরিচালনা ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনও জ্ঞান না থাকায়, তাদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে বাধ্য করা হয়েছিল যেখানে তাদের স্থিতিশীল জায়গায় থাকতে এবং অন্য কর্মক্ষেত্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছিল, কোম্পানির সাথে কর্মসংস্থান চুক্তি বাতিল করার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।"
শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা দুর্বল উপস্থিতি এবং অপর্যাপ্ত দক্ষতার কারণে বরখাস্তের বিষয়ে আমাদের অবহিত করেছিল, কিন্তু পরে তারা পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে কর্মসংস্থান চুক্তি বাতিল করে।
বরখাস্ত কর্মীদের সহায়তাকারী শ্রমিক ফেডারেশন
ইমিগ্রেশন অফিসকে অনুরোধ করেছে যে,
শুরু থেকেই তাদের আবাসিক অবস্থার পরিবর্তন পুনর্বিবেচনা করার জন্য।
প্রতিবেদক কিম গিউ-হি বলেন,
তারা কেন্দ্রীয় শ্রম সম্পর্ক কমিশনের কাছে অন্যায্য বরখাস্ত থেকে মুক্তির জন্য আবেদন করেছে, আবার শিপইয়ার্ডে কাজ করার অনুমতি চেয়েছে এবং সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে।
উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ কোরিয়ায় উচ্চ বেতনের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশি কতিপয় দালাল ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে লোক নিয়ে আসেন। তারপর অদক্ষ শ্রমিক আখ্যা দিয়ে তাদের কোম্পানি থেকে বের করে দিয়ে আবার নতুন লোক নিয়ে আসে এবং প্রতিটি নতুন লোক নিয়োগে কোম্পানির সাথে বড়ো অংকের লেনদেন হয়। পূর্বে যারা এসেছে তারা অবৈধ অভিবাসী হয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। কোরিয়াস্থ বাংলাদেশি সিনিয়র নাগরিকরা বলেন, এই দালালদের চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং এদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তারা এই সমস্ত দালালদের খপ্পরে না পড়ে ভালোভাবে খোঁজ খবর নিয়ে কোরিয়ায় আসার জন্য বাংলাদেশিদের আহ্বান জানান।