খালিদ বিন ইমরান: আজ কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের (সিপিআই) লাইব্রেরির অভ্যন্তরে গোপনে সংরক্ষিত অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত বই এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য খুঁজে পাওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে সাবেক সরকার পতনের পর তাদের
দাবির মুখে ইনস্টিটিউট প্রশাসন শেখ মুজিবুর রহমানের নামে করা 'বঙ্গবন্ধু কর্নার'টি
ভেঙে দিলেও কর্নারের সংরক্ষিত বই ও ভাস্কর্যগুলো লাইব্রেরির ভেতরে সরিয়ে রেখেছিল। বুধবার
(১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ ইং) শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরি পরিদর্শনে গেলে সেই বই ও ভাস্কর্য দেখতে
পেয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
প্রশাসনের বিরুদ্ধে 'বেইমানি'র অভিযোগ করেন সাধারণ ছাত্ররা।
ছাত্রদল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধিরা
অবিলম্বে এই পদক্ষেপের কারণ জানতে চেয়ে প্রশাসনকে ঘেরাও করেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা
প্রশ্ন তোলেন, "জুলাই শহীদ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের রক্ত
এখনও শুকায়নি। এ ধরনের সংরক্ষণ কি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের রক্তের সাথে বেইমানি?
নাকি ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী পরিবারকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার কোনো চক্রান্ত চলছে?"
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, সংরক্ষিত বইগুলো মূলত সাবেক
'ফ্যাসিস্ট' সরকারের একপক্ষীয় প্রচারণার অংশ ছিল, যা ছাত্রদের কাছে 'মিথ্যা তথ্য' পরিবেশন
করত। তারা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ছাত্র নিপীড়ন, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার এবং হাজারো
মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা প্রশাসনের কাছে সংরক্ষিত
সামগ্রীগুলো দ্রুত অপসারণের সঠিক ব্যাখ্যা দাবি করেন।
লাইব্রেরিতে 'জুলাই শহীদ কর্নার' করার দাবি:
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দৃঢ়ভাবে দাবি জানান, লাইব্রেরির অভ্যন্তরে
সংরক্ষিত শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার একপক্ষীয় সব বই এবং ভাস্কর্য অবিলম্বে সরিয়ে ফেলতে
হবে। 'বঙ্গবন্ধু কর্নার'টি নতুন করে 'জুলাই শহীদ কর্নার' বা 'স্বাধীনতা কর্নার' নামে
নামকরণ করতে হবে।
ছাত্র প্রতিনিধিরা বলেন, নতুন কর্নারে জুলাই শহীদদের ছবি,
আন্দোলন নিয়ে লিখিত তথ্য এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক তথ্য সমৃদ্ধ বই দিয়ে
সাজাতে হবে। তারা স্বেচ্ছায় জুলাইয়ের বই এবং স্বাধীনতা বিষয়ক বই সংরক্ষণের সুযোগ রাখারও
প্রস্তাব করেন।
অধ্যক্ষের আশ্বাস ও লাইব্রেরিয়ানের ভিন্ন চিন্তা:
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা ঘটনাস্থলে
আসেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি
করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এদিকে, ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরিয়ান জানান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে
বই পড়ার আগ্রহ আরও বাড়াতে এবং লাইব্রেরির প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে তিনি বিভিন্ন
ধরনের বই পড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চান। তাঁর মতে, এমন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সহজেই
শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরির প্রতি আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। তিনি এই প্রতিযোগিতা আয়োজন
করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্ট কামনা করেন।
সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে
বলেন, যদি দ্রুত তাদের দাবি পূরণ করা না হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আকাশ টিভি/ন