ঢাকা | | বঙ্গাব্দ

হরতালে বিএনপির মামলায় বৃটিশ নাগরিককে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ

author
Reporter

প্রকাশিত : Nov 4, 2023 ইং
ছবির ক্যাপশন:
ad728

আবদুল্লাহ আল মারুফ, কুমিল্লা।।

কুমিল্লায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ। ওই মামলায় এক বৃটিশ নাগরিককে আসামি করা হয়েছে। পরে তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ওই বৃটিশ নাগরিকের পরিবারের দাবি তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে জানেনও না।


পরিবার জানায়, বৃটিশ ওই নাগরিক লন্ডনের ডিউজবার্গ শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিত (৪২)। তিনি জন্মসূত্রে ব্রিটেনের নাগরিক। তার বাবা বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার মনোহরপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল মুকিত।


জানা গেছে, ২৯ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দল গুলোর ডাকা হরতালের দিন কুমিল্লার চকবাজারে বিএনপি নেতাদের মিছিলে ধাওয়া দেয় পুলিশ। এসময় সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টেয়ারশেল ছুড়ে। কয়েকজন নেতাকর্মীকে তখন গ্রেফতার করা হয়। কয়েকজন আহত হয়। অপরদিকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়লে কয়েকজন আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৩০ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এঘটনায় বিএনপি নেতাদের নামের সঙ্গে নিজ বাসায় অবস্থান করা ওই বৃটিশ নাগরিকের নামও যুক্ত করা হয় বলে দাবি পরিবারের।


মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলার সর্বশেষ নামীয় আসামি ব্রিটিশ নাগরিক মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিত। ওই মামলার বাদী কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই জীবন কৃষ্ণ মজুমদার। মামলার নথিতে স্বাক্ষর করেন কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ রকিবুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ।  


মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিতের খালাতো ভাই ও বোনের জামাই আবদুল গফফার রুবায়েদ বলেন, উনি জন্মসূত্রে ব্রিটেনের নাগরিক। করোনার আগে উনি বাংলাদেশে আসেন। তিনি বাংলাদেশে এসে বিয়ে করেন এবং বউকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র রেডি করছিলেন। তাই উনার দেরি হচ্ছিল। ২০২৭ সাল পর্যন্ত উনার ভিসার মেয়াদ আছে। কিছুদিন পরই চলে যাওয়ার কথা বউ নিয়ে। উনি বাংলা কথাও ঠিক মতো বলতে পারেন না। বাংলাদেশের রাজনীতির সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই। যেদিন এ ঘটনা সেদিন উনি বাসায়। নিজের চুল কাটার নাপিতও বাসায় নিয়ে আসেন। কোনদিন শপিং করতেও যান না। উনি বাইরে গেলে আরেকজন সাথে যাওয়া লাগে। অথচ উনাকে মামলার আসামি করা হয়েছে। এই বিষয়ে পরিবার থানায় যোগাযোগ করেছে। পুলিশের অফিসার নাকি দুঃখপ্রকাশ করেছে।


এবিষয়ে মামলার বাদী এসআই জীবন কৃষ্ণ মজুমদার বলেন, অনেক সিনিয়র অফিসারের উপস্থিতিতে এটা করা হয়েছে। আমিতো ক্ষুদ্র একজন অফিসার। উনি ঘটনাস্থলে ছিল তাই নাম লেখা হয়েছে। উনি কোর্টে জবাব দেবেন উনি বৃটিশ নাগরিক। এই কর্মকর্তা থানায় গিয়ে উনার সঙ্গে কথা বলতে বলে লাইন কেটে দেন। 


এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিতের  আইনজীবী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ২৯ অক্টোবরের ঘটনার পরদিন আমার মক্কেল ইলিয়াস মুকিতকে পুলিশ তার বর্তমান বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের সময় তার কাছে কোন হামলার প্রমাণ বা ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রমাণ পায়নি। এমন কি ঘটনাস্থলে তিনি ছিলেন না। পুলিশ মামলা দেয়ার পর তাকে বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। আসামির রিমান্ড বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে রিমান্ড প্রাথর্না আসলেও  এ আসামির কোন রিমান্ড চাওয়া হয়নি। হয়তো আসামি ঘটনার সহিত সম্পৃক্ততা নেই বলে৷ আমরা বিচারকের কাছে অন্তবর্তীকালীন জামিন আবেদন করেছি এবং সকল কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। এদিকে বৃটিশ হাই কমিশন থেকে আমার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে। এবিষয়টা তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। তাদের নাগরিকের যত সহযোগিতা দরকার তারা প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে।


এ সময় তিনি আরোও বলেন, থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হলে  ঘটনার সাথে আসামির সম্পৃক্ততা পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত পূর্বক এফ আই আর হিসেবে গণ্য করে। মামলায় কোন নির্দোষ আসামি ভোগান্তির শিকার হবে কিনা? আমার ধারণা এক্ষেত্রে পুলিশ বিষয়টি উপেক্ষা করেছে। আমরা চাই প্রকৃত আসামিরা শাস্তি পাক কিন্তু বাংলাদেশে কোন বিদেশি নাগরিক ভোগান্তির শিকার হলে তা দেশের জন্যও মানহানিকর।


এবিষয়ে কুমিল্লার কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ বলেন, কে বলছে উনি বৃটিশ নাগরিক। উনিতো দেশেই থাকেন, দেশেই শিক্ষকতা করেন। আপনি যেহেতু জানছেন আমার এটা জেনে বলতে হবে।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Reporter

কমেন্ট বক্স
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ আকাশ টিভি২৪.কম
সকল কারিগরী সহযোগিতায় A2SYS