কুমিল্লা প্রতিনিধি।।
গত ১ আগস্ট কুমিল্লা সদর উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে এক বিধবা নারী ও তাঁর মেয়ের উপর হামলা চালিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, তাঁদের সম্পত্তি দখল করে এলাকা ছাড়া করতেই হামলা চালিয়েছে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বিধবা নারী রাবেয়া খাতুন ওই গ্রামের মৃত মাহাবুব আলমের স্ত্রী। হামলায় আহত হয়েছেন তাঁর মেয়ে তিশা আক্তার।
বুধবার বিকেলে বিধবা রাবেয়া খাতুন জানান, ঘটনার দিন গত ১ আগস্ট রাতেই হামলার ঘটনায় কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। পরে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি শুরু করে উল্টো ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার জন্য চাপ দিতে থাকে তাঁদের। ওই অভিযোগটির তদন্ত করছিলেন কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার চকবাজার ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিমল দাস। একটানা ৮দিন চেষ্টার পরও পুলিশ মামলাটি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত না করায় সর্বশেষ গত সোমবার (৮ আগস্ট) কুমিল্লার আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
বুধবার বিকেলে বাদী পক্ষের আইনজীবী আতিকুল ইসলাম বলেন, থানা পুলিশ মামলাটি গ্রহণ না করায় বাধ্য হয়ে ওই বিধবা নারীকে আদালতে আসতে হয়েছে। সোমবার বিকেলে কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক ওই নারীর মামলাটি আমলে নিয়েছেন। এরপর আগামী ১৪ নভেম্বর আসামিদের আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেছেন।
ভুক্তভোগী রাবেয়া খাতুন জানান, গত ১ আগস্ট বিকেলে তাদের উপর হামলা চালিয়েছেন প্রতিবেশী মন্তাজ মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা। হামলার সময় মন্তাজ মিয়া বহিরাগত লোকজনও এনেছিলেন। আদালতে দায়ের করা মামলায় মন্তাজ মিয়াসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩/৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন ২০২০ সালে। মৃত্যুর আগে মন্তাজ মিয়ার কাছে দুই গন্ডা জায়গা বিক্রি করেন তিনি। সেখানে এখন দৌতলা বাড়ি করেছেন মন্তাজ। তাঁর বিল্ডিংয়ের পাশেই আমাদের টিনের ঘর। বাড়ির ছাদের সকল পানি আমাদের ঘরের দিকে ফেলেন মন্তাজ মিয়া। এতে বৃষ্টি এলেই আমাদের ঘরে তাদের ছাদের পানি প্রবেশ করে। এনিয়ে আমার মেয়ে প্রতিবাদ করলে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়।
ওই বিধবার মেয়ে তিশা আক্তার বলেন, হামলার সময় আমাদের মা-মেয়েকে লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। এছাড়া আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। পরে আমার মা-মেয়ে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। ঘটনার দিন রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ করেও পুলিশের কাছ থেকে কোন প্রতিকার পাইনি। উল্টো পুলিশ আসামিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে ঘটনাটি মিমাংসার চেষ্টা করেছে। হামলাকারীদের মূল উদ্দেশ হলো আমাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে আমাদের সম্পত্তি দখল করা।
তবে মামলা নিতে গড়িমসির অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই বিমল দাস বলেন, ঘটনার পরদিন বিকেলে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তখন দুইপক্ষই বলেছেন- তাঁরা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করবেন। পরে তাদেরকে বলেছি- তারা নিজেরা বিষয়টি সমাধান করতে না পারলে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেব।
পুলিশের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। এ ঘটনায় বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।